IQNA

আমেরিকান এবং জায়নিস্টের খেদমত করাই আইএসের লক্ষ্য

22:13 - January 06, 2024
সংবাদ: 3474894
ইকনা: আলী মোকাদ্দেসি লিখেছেন: কেরমানে সন্ত্রাসী হামলার দায় দায়েশ তথা আইএস স্বীকার করুক কিম্বা ইসরাইল কোনো পার্থক্য নেই। কারণ দায়েশের সথে আমেরিকা এবং ইসরাইলের যে সম্পর্ক রয়েছে তা মোসাদ অথবা সিআইএ অস্বিকার করতে পারবে না।
মুসলিম ব্রাদারহুডের অধ্যয়নের চ্যানেলে "আইএসআইএস; ইসরাইলি শিকার বা এজেন্ট" শিরোনামে একটি নোটে রাজনৈতিক বিশ্লেষক আলী মোকাদ্দেসি লিখেছেন: তাকফিরি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী দায়েশ এবং আমেরিকা ও ইসরাইল একই লক্ষ্য অনুসরণ করে।
 
কিছু জল্পনা কল্পনা হতে পারে যে ইসরাইল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য গুরুতর হুমকির জন্য আইসিল নিজেকে কোরবানি দিয়েছিল; তবে বাস্তবতা হ'ল সন্ত্রাসী অপরাধ আইএসআইএস বা ইসরাইল দ্বারা সংঘটিত হয়, মামলার প্রকৃতিতে তাওফিরি নয়;  কারণ দায়েশের সথে আমেরিকা এবং ইসরাইলের যে সম্পর্ক রয়েছে তা মোসাদ অথবা সিআইএ অস্বিকার করতে পারবে না।
 
 
তাকফিরি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী দায়েশ গত বৃহস্পতিবার ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের কেরমান শহরে চালানো ভয়াবহ বোমা হামলার দায়িত্ব স্বীকার করেছে। পশ্চিম এশিয়া অঞ্চলে ত্রাসের রাজত্ব কায়েমের লক্ষ্যে গঠিত সন্ত্রাসী গোষ্ঠী দায়েশ আমেরিকা এবং ইহুদিবাদী ইসরাইল শাসক গোষ্ঠীর প্রক্সি এজেন্ট হিসেবে পরিচিত।
 
বুধবার সন্ধ্যায় যখন ইরানের জনগণ ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর কুদস ফোর্সের সাবেক কমান্ডার লে. জেনারেল কাসেম সোলেইমানি এবং তার সহযোদ্ধাদের  ৪র্থ শাহাদাত বার্ষিকী উদযাপন করছিল তখন কেরমানে শহীদ গুলজারের দিকে যাওয়ার রাস্তায় ২টি ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। এতে অন্তত ৮৯ জন নিহত ও ২৮৬ জন আহত হয়।  
 
পশ্চিম এশীয় অঞ্চলের পরিস্থিতি বিশেষ করে গাজার যুদ্ধ এবং সেখানে প্রতিরোধকামীদের মোকাবেলায় ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠীর পরাজয় ও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি বিবেচনায় প্রথম থেকেই এই অবৈধ সরকার এবং এর প্রধান সমর্থক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সন্ত্রাসী হামলায় পেছনে প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে মনে করা হলেও ওয়াশিংটন এবং তেল আবিব অতীতের মতো এ অপরাধযজ্ঞের জড়িত হওয়ার ব্যাপারে তাদের ভূমিকা অস্বীকার করেছে। 
 
যেমন মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার কেরমানে সন্ত্রাসী ঘটনা সম্পর্কে দাবি করেছেন যে ওয়াশিংটন কোনোভাবেই ইরানে বিস্ফোরণের সঙ্গে জড়িত নয় এবং এই ঘটনায় ইসরায়েল জড়িত আছে বলে বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই।" ইহুদিবাদী শাসকের সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারিও তার বুধবার রাতের সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ইরানে বিস্ফোরণ নিয়ে আমাদের কিছু বলার নেই এবং আমাদের মনোযোগ হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের দিকে।
 
বাস্তবতা হলো ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের শত্রুদের সংগঠিত সমর্থন ছাড়া আইএসের মতো একটি সন্ত্রাসী দল কখনোই এ ধরনের অপরাধ করতে পারে না।
 
সুনির্দিষ্ট প্রমাণ রয়েছে যে আমেরিকা প্রতিরোধ অক্ষের মোকাবিলা করার জন্য তাকফিরি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী দায়েশের প্রতিষ্ঠা ও  তাদের লালন পালনে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে। এছাড়া ইরাক, সিরিয়া এবং তারপরে আফগানিস্তানে দায়েশের কার্যক্রম সম্প্রসারণের জন্য ক্রমাগত প্রচেষ্টা চালিয়েছে। পশ্চিমা দেশগুলোর নেতা আমেরিকা তার আরব অংশীদারদের সঙ্গে নিয়ে আইএসসহ তাকফিরি সন্ত্রাসীদের ব্যাপক আর্থিক ও সামরিক সহায়তা দিয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে এক নির্বাচনী বক্তৃতায় বলেছিলেন, ওবামা ও হিলারি বিশ্বাসযোগ্য নন এবং আইএস সৃষ্টিতে তাদের হাত রয়েছে। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিন্টনও আইএস সৃষ্টিতে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ওবামার হাত ছিল বলে দাবি করেছিলেন।
 
এছাড়াও, আমেরিকান রাজনীতিবিদ "রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়র" যিনি চলতি বছর মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন এবং ডেমোক্রেটিক পার্টিতে জো বাইডেনের প্রতিপক্ষ হিসাবে মনোনিত হয়েছে তিনি আইএস সন্ত্রাসী গোষ্ঠীি সৃষ্টিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার কথা স্বীকার করেছেন। 
 
অন্যদিকে যদিও ইহুদিবাদী ইসরাইল অতীতের মতো নীরবতা বা অস্বীকারের মাধ্যমে কেরমানে সন্ত্রাসী হামলায় নিজেদের ভূমিকা অস্বীকার করার চেষ্টা করছে তবে ইরান এবং অন্যান্য দেশগুলোকে নিরাপত্তাহীন করতে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে সহযোগিতা করার ব্যাপারে ইসরাইলের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। যেমন ২০১৯ সালে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর চিফ অফ জেনারেল স্টাফ গাদি আইসেনকোট স্বীকার করেছিলেন যে তেল আবিব সিরিয়ায় সন্ত্রাসীদের "হালকা অস্ত্র" দিয়ে "আত্মরক্ষার জন্য" সজ্জিত করেছে। ইরানে পারমাণবিক বিজ্ঞানীদের হত্যার মতো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ছাড়াও ইরানের ইসলামী প্রজাতন্ত্রের কর্তৃপক্ষ বারবার সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আইএস এবং ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠীর মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এবং সন্ত্রাসবাদে মোসাদের গুপ্তচর সংস্থার ভূমিকা সম্পর্কে নথি উপস্থাপন করেছে। 
 
যাইহোক, আমেরিকা এবং ইহুদিবাদী ইসরাইল কেরমানে সন্ত্রাসী হামলায় নিজেদের জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করলেও এই অপরাধযজ্ঞের দায় আইএসসহ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদদাতাতের উপর বর্তায়। এ প্রসঙ্গে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের রাজনৈতিক বিভাগের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ জামশিদি এই হামলার প্রথম ঘণ্টায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠী ইসরাইল সন্ত্রাসী হামলায় জড়িত নয় বলে ওয়াশিংটনের দাবির কথা উল্লেখ করে জোর দিয়ে বলেছেন যে কেরমানে অপরাধযজ্ঞের দায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং এটি ইহুদিবাদী  ইসরাইলের ওপর বর্তায় । কারণ এসব সন্ত্রাসী তাদের হাতিয়ার হিসেব ব্যবহৃত হচ্ছে ।
captcha