IQNA

ইমাম জাফর আল সাদিক মুসলিমদের মধ্যে সর্বপ্রথম হেলিওসেন্ট্রিক মডেল প্রস্তাব করেছিলেন

9:57 - November 19, 2023
সংবাদ: 3474677
তেহরান (ইকনা):নবীজি(সাঃ)-র বংশধর আহলে বায়তের অন্তর্ভুক্ত ইমাম জয়নুল আবেদীনের দৌহিত্র ইমাম জাফর আল সাদিক (৭০২-৭৬৫) মুসলিমদের মধ্যে সর্বপ্রথম হেলিওসেন্ট্রিক মডেল (সূর্যকেন্দ্রিক তত্ত্ব) প্রস্তাব করেছিলেন।

তিনি সেই সময়ে প্রচলিত মহাবিশ্বের জিওসেন্ট্রিক (ভূকেন্দ্রিক তত্ব) মডেলকে খণ্ডন করেছিলেন, যেখানে বলা হয় পৃথিবী স্থির আছে এবং সূর্য, চাঁদ এবং অন্যান্য গ্রহগুলি তার চারপাশে প্রদক্ষিণ করছে। তিনিই মুসলিমের মধ্যে প্রথম টলেমির তত্ত্বকে খণ্ডন করেন। তাঁর যুক্তি ছিল যে, সূর্যের দুটি গতিবিধি রয়েছে, একটি এক বছরে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে এবং অন্যটি ২৪ ঘন্টায় পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে দিন এবং রাত সৃষ্টি করে। জাফর আল-সাদিক যুক্তি দিয়েছিলেন যে সূর্য যদি এক বছরে পৃথিবীর চারপাশে ঘুরতে থাকে তবে এটি হঠাৎ করে তার গতিপথ পরিবর্তন করতে পারে না এবং একদিনে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করতে পারে না। তিনি পরামর্শ দিয়েছিলেন যে, এটি কেবল ও কেবল সূর্যকেন্দ্রিক তত্ত্ব দিয়েই ব্যাখ্যা করা যেতে পারে, যেখানে পৃথিবী তার নিজের অক্ষে এবং সূর্যের চারপাশে ঘোরে।(★)
 
ভাবা যায়! তখনকার স্থান-কাল বিবেচনায় কী বুদ্ধিদীপ্ত যুক্তি আর চিন্তাভাবনা! নবীজির ওফাতের মাত্র ৭০ বছর পর জন্ম নিয়ে তাঁরই বংশধারা থেকে আগত একজন আলেম ও জ্যোতির্বিজ্ঞানী তখনকার বিশ্বের প্রবল ও প্রতাপশালী টলেমীর মতবাদকে তুবড়ি মেড়ে উড়িয়ে দেন তার অসাধারণ চিন্তাচেতনা আর যুক্তিবিদ্যার মাধ্যমে। অথচ এসব তথ্য আমাদের কখনো জানানো হয় না। পরবর্তীতে উনার মতবাদ দ্বারা একই সিদ্ধান্তে আসেন ফখর উদ্দিন আর রাজি, ইবনে আল হাইথাম, আল কুশী, আল বিরুনী, কুতুবউদ্দিন আল সিরাজি সহ প্রমুখেরা। পরবর্তীরা আরো গোছালো ও বৈজ্ঞানিকভাবে একের পর এক অভিনব পন্থায় গ্রীক জ্যোতির্বিজ্ঞান ওপদার্থবিজ্ঞানের ভুল-ভ্রান্তির উপর লাজওয়াব সব কাজ করে গেছেন মুসলিম বিজ্ঞানীরা। অথচ ইউরোপ পুরোপুরি চেপে যায় এই ব্যাপারগুলো। বহুল প্রচলিত ডিস্কোর্স টলেমীর মতবাদ এরিস্টাকার্স ভুল প্রমাণিত করলেও তা চাপা পড়ে যায় বহুকাল, এরপর এক লাফে ইউরোপে তা ব্রনো,গ্যালিলিও, টাইকো ব্রাহে, কেপলারদের মাধ্যমে সংশোধনের ইতিহাস আমাদের গেলানো হয়। যদিও কিছু সংখ্যক ইউরোপের বিজ্ঞানের ইতিহাসবিদ এ বিষয়ে ভিন্নমত প্রকাশ করেছেন। কিন্তু এখনো ইউরোপের পপুলার কালচারে এ ইতিহাস তমসাচ্ছন্ন।
 
আজকালকার মুসলিমদের জ্ঞানজগতে এতো শোচনীয় অবস্থা কেন? অথচ আমাদের পূর্বসুরীগণ জ্ঞান-বিজ্ঞানের দুনিয়ায় বিশ্বব্যাপী রাজত্ব করেছেন। উনারা একইসাথে ধর্মীয় জ্ঞান আর দুনিয়াবি জ্ঞানের অসাধারণ ধারক-বাহক ছিলেন। কিভাবে আমরা আবারো হারানো গৌরব ফিরে পাবো এই প্রশ্ন গুলো কি মুসলিম যুবকদের মাথায় আঘাত করে না প্রতিনিয়ত?
 
★রেফারেন্সের জন্য দেখা যেতে পারে,
 
১। Roshdi Rashed (2007). "The Celestial Kinematics of Ibn al-Haytham", Arabic Sciences and Philosophy 17, p. 7–55. Cambridge University Press.
 
২। Reseach Committee of Strasburg University, Imam Jafar Ibn Muhammad As-Sadiq A.S. The Great Muslim Scientist and Philosopher, translated by Kaukab Ali Mirza, 2000. Willowdale Ont. ISBN 0969949014.
 
৩। Adi Setia (2004), "Fakhr Al-Din Al-Razi on Physics and the Nature of the Physical World: A Preliminary Survey", Islam & Science 2, 1/125 Bussuud Efendi, Irshadu'l-Akli's-Selim 1/61.
 
৪। Fakhr al-Din al-Razi, Tafsir al-Kabir 2/95
 
*****+++++++++++++++
*****
পাদটীকা :
          মুহাম্মদ সজলের এ লেখা খুবই  গুরুত্বপূর্ণ ও তথ্য সমৃদ্ধ । এ লেখাটির জন্য তাকে বিশেষ ধন্যবাদ । পশ্চিমারা এভাবে মুসলমান মনীষী ও বিজ্ঞানীদের বহু আবিষ্কার ও উদ্ভাবন চুরি করে নিজেদের ইউরোপীয় খ্রিষ্টান বিজ্ঞানী ও মনীষীদের নামে চালিয়ে দিয়েছে এবং বিজ্ঞান সংক্রান্ত জাল ইতিহাসও রচনা করেছে । আর এ ধরণের চৌর্যবৃত্তি ও জাল ইতিহাস রচনায় ইউরোপীয়রা অত্যন্ত দক্ষ এবং তাদের কোনো জুড়ি নেই । সমগ্র বিশ্ব জুড়ে তাদের আধিপত্য ও প্রচার যন্ত্রের অধিকারী হওয়ার কারণে বিশেষ করে মুসলমান দেরকেও তারা বিশ্বাস করিয়েছে যে  ইউরোপীয় বিজ্ঞানীরাই বিজ্ঞানের সকল গুরুত্বপূর্ণ সূত্র ও বিষয় উদ্ভাবন ও আবিষ্কার করেছেন । তাই জ্ঞান-বিজ্ঞানের ইতিহাস পুন:লিখনের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা দিন দিন তীব্রভাবে অনুভূত হচ্ছে ।
       আমরা নীচে মহানবীর (সা) আহলুল বাইত (আ) এর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি তুলে ধরছি :
ইমাম যাইনুল আবেদীন ( আ ) ইমাম হুসাইনের (আ) পুত্র এবং মহানবীর ( সা ) পবিত্র আহলুল বাইতের (আ) ১২ মাসূম ইমামের ৪র্থ মাসূম ইমাম । তাঁর পুত্র আহলুল বাইতের ( আ ) ৫ম মাসূম ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে আলী আল - বাক্বির (আ) যিনি ইমাম হুসাইনের (আ) পৌত্র। আর ইমাম বাক্বিরের ( আ ) পুত্র আহলুল বাইতের (আ) ৬ষ্ঠ মাসূম  ইমাম জাফর আস সাদিক্ব ( আ ) । সুতরাং ইমাম জাফর আস সাদিক্ব ( আ ) ইমাম যাইনুল আবেদীনের ( আ ) পৌত্র এবং ইমাম হুসাইনের (আ) প্রপৌত্র ( পৌত্রের পুত্র ) ।     মহানবীর ( সা ) আহলুল বাইতের বারো মাসূম ইমামের সাথে পরিচিত 
হওয়া , তাঁদের ফাযায়েল - মানাক্বিব , গুণাবলী , জীবন চরিত ( সীরত ) , শিক্ষা , আদর্শ , বাণী , কর্মকাণ্ড এবং জ্ঞান - বিজ্ঞান , ধর্ম , সংস্কৃতি , কৃষ্টি ও সভ্যতায় তাঁদের অবদান সম্পর্কে সঠিক ভাবে আমাদের সবার জানতে হবে । মুতাওয়াতির ( অকাট্য সূত্রে বর্ণিত ) হাদীসে সাকালাইনে মহানবী (সা) কেবল পবিত্র কুরআন ও তাঁর পবিত্র আহলুল বাইত ( আ )কে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরা ও এদু'ভয়ের অনুসরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন মহানবী ( সা ) স্বীয় উম্মতকে যাতে তারা ( উম্মত ) বিচ্যুত না হয় । আর এই পবিত্র কুরআন ও নবীজীর ( সা ) পবিত্র আহলুল বাইত ( আ ) মহাবীর কাছে হাউযে কাওসারে উপনীত
হওয়া পর্যন্ত কখনোই পরস্পর বিচ্ছিন্ন হবে না । নবী করীমের  ( সা ) পবিত্র মাসূম আহলুল বাইত ( আ ) হচ্ছেন : বেহেশতের নারীদের নেত্রী হযরত ফাতিমা ( আ ) এবং ১২ জন মাসূম ইমাম ; এই বারো মাসূম ইমামের ১ম মাসূম ইমাম হচ্ছেন হযরত ফাতিমার (আ) স্বামী হযরত আলী (আ) এবং ২য় ও তৃতীয় ইমাম তাঁদের ( হযরত ফাতিমা ও ইমাম আলী ) দুই সন্তান ইমাম হাসান (আ.) ও ইমাম হুসাইন ( আ.) , ৪র্থ মাসূম ইমাম , ইমাম হুসাইনের ( আ ) পুত্র হযরত আলী ইবনুল হুসাইন যাইনুল আবেদীন (আ) , ৫ম মাসূম ইমাম হযরত মুহাম্মাদ ইবনে আলী আল- বাক্বির (আ) , ৬ষ্ঠ মাসূম ইমাম হযরত জা'ফার ইবনে মুহাম্মাদ আস সাদিক্ব্ ( আ ) , ৭ম মাসূম ইমাম হযরত মূসা ইবনে জাফার আল কাযিম (আ) , ৮ম মাসূম ইমাম হযলত আলী ইবনে মূসা রিযা ( আ ) , ৯ম মাসূম ইমাম হযরত মুহাম্মাদ ইবনে আলী আত্ তাক্বী আল জাওয়াদ (আ) , ১০ম মাসূম ইমাম হযরত আলী ইবনে মুহাম্মাদ আননাক্বী আল হাদী (আ) , একাদশ মাসূম ইমাম হযরত হাসান ইবনে আলী আল - আস্কারী ( আ ) এবং দ্বাদশ মাসূম ইমাম অর্থাৎ নবীজীর আহলুল বাইতের বারো মাসূম ইমামের সর্বশেষ মাসূম ইমাম হযরত মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান আল - কায়েম আল - হুজ্জাহ আল মাহদী সাহিবুয যামান ( যুগের অধিপতি) ও ইমামুয যামান ( যুগের ইমাম ) । তিনি দীর্ঘ কাল ধরে গায়েব আছেন ; অত:পর মহান আল্লাহর অনুমতি ও ইচ্ছায় তিনি শেষ যামানায় আবির্ভূত হয়ে সমগ্র পৃথিবীতে পূর্ণ ন্যায়বিচার , দ্বীন এবং ইসলামী হুকূমত প্রতিষ্ঠা করবেন । আর হযরত রাসূলুল্লাহর ( সা ) পরে যে মুসলিম উম্মাহর ওপর কেবল বারো জন  ইমাম ( আমীর ও খলীফা ) আগমন হবে তা বিশুদ্ধ ( সহীহ ) প্রতিষ্ঠিত ( সাবিত ) , সকল ইসলামী ফির্কা ও মাযহাবের কাছে গৃহীত মকবূল  মুত্তাফাকুন আলাইহি মুতাওয়াতির ( অকাট্য সূত্রে বর্ণিত ) হাদীসের আলোকে প্রমাণিত ও প্রতিষ্ঠিত । আর বারো ইমামের হাদীস সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমেও বিদ্যমান ।  মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে :
 
হাদীস নং ৪৭২৯ : সাহাবী জাবির ইবনে সামুরা বলেন : আমি মহানবী ( সা )কে বলতে শুনেছি :  " বারোজন খলীফার কাছে ইসলাম আযীয্ ( অতিপ্রিয় , মহার্ঘ ও বলশালী ) থাকবে । "এরপর তিনি ( সা ) কিছু কথা বললেন যা আমি বুঝি নি । আমার পিতাকে জিজ্ঞেস করলাম: " তিনি কী বললেন ? " অত: পর তিনি (জাবিরের পিতা ) বললেন : " তাদের ( বারো খলীফা ) সবাই হবেন কুরাইশ গোত্রীয় । "
    হাদীস নং ৪৭৩০ : জাবির ইবনে সামুরা বলেন : বারো জন খলীফার কাছে এ বিষয় আযীয ( অতিপ্রিয় , মহার্ঘ ও বলশালী অর্থাৎ সুরক্ষিত/ সংরক্ষিত ) থাকবে । জাবির বলেন : এরপর তিনি ( মহানবী সা ) কিছু কথা বললেন যা আমি বুঝি নাই । তাই আমি আমার পিতাকে বললাম : " তিনি ( সা ) কী বললেন ? " তিনি ( জাবিরের পিতা ) বললেন : [ তিনি সা বললেন : ] তাদের সবাই কুরাইশী ( কুরাইশ গোত্রীয় ) । "
হাদীস নং ৪৭৩১ : জাবির ইবনে সামুরা বলেন : আমি রাসূলুল্লাহর (সা) কাছে গেলাম এবং আমার সাথে আমার বাবাও ছিলেন । অত:পর আমি রাসূলুল্লাহকে ( সা ) বলতে শুনলাম: " এই ধর্ম বারো জন খলীফার কাছে আযীয ( অতিপ্রিয় , মহার্ঘ ও বলশালী ) এবং অপারাজেয় ও দুর্ভেদ্য ( মানী') অর্থাৎ সম্পূর্ণ সংরক্ষিত ও সুরক্ষিত থাকবে । " এরপর তিনি ( সা ) কিছু কথা বললেন লোকেরা ( হৈচৈ করার কারণে ) আমাকে তা শুনতে দেয় নি । আমি তখন আমার পিতাকে বললাম : " তিনি ( সা) কী বললেন ? " আমার পিতা বললেন : ( রাসূলুল্লাহ সা বলেছেন :) তাদের সবাই কুরাইশী ( কুরাইশ গোত্রীয় ) । "
عنْ جَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ ، قَالَ : انْطَلَقْتُ إِلَیٰ رَسُوْلِ اللّٰهِ (ص) وَ مَعِيْ أَبِيْ . فَسَمِعْتُهُ یَقُوْلُ : « لَا یَزَالُ هٰذَا الدِّیْنُ عَزِيْزَاً مَنِيْعَاً إلَی اثْنَيْ عَشَرَ خَلِيْفَةً » فَقَالَ کَلِمَةً صَمَّنِيْهَا النَّاسُ ، فَقُلْتُ لِأَبِيْ :« مَا قَالَ ؟» . قَالَ : « کُلُّهُمْ مِنْ قُرَيْشٍ .»
 
সুতরাং এ বিষয় ( ১২ ইমামে বিশ্বাস ) ইনকার ( অস্বীকার ) এবং অবহেলা , অগ্রাহ্য ও উপেক্ষা  করার উপায় নেই । স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সা) এবং তাঁর পবিত্র আহলুল বাইত [ হযরত ফাতিমা (আ) এবং এই বারো মাসূম ইমাম ] হচ্ছেন ১৪ মাসূম । আহলুল বাইতের (আ) ইসমত ( নিষ্পাপ এবং ছোট বড় সকল ধরণের পাপ পংকিলতা , ঐচ্ছিক ও অনৈচ্ছিক ভুল ভ্রান্তি , দোষ , ত্রুটি ও বিচ্যুতি হতে মুক্ত ও পবিত্র হওয়া ) সূরা -ই আহযাবের ৩৩নং আয়াত ও এ আয়াতের শানে নুযূলে বিদ্যমান এবং মহানবীর আহলুল বাইতের (আ) পরিচিতি প্রদানকারী মুতাওয়াতির হাদীসে কিসা ( حَدِیْثُ الْکِسَاءِ চাদরের হাদীস ) এবং মুতাওয়াতির হাদীসে সাকালাইন থেকে স্পষ্ট প্রমাণিত হয়ে যায় । মুতাওয়াতির হাদীসের আলোকে রাসূলুল্লাহর (সা) পরে কিয়ামত পর্যন্ত প্রতিটি যুগে পবিত্র কুরআন ও আহলুল বাইতের কখনো পরস্পর বিচ্ছিন্ন না হওয়া  এবং এ দু'ভয়ের সার্বক্ষণিক সহবিদ্যমান থাকা , প্রতিটি যুগ যে কখনোই মহান আল্লাহর মনোনীত ইমাম ও হুজ্জাত বিহীন হবে না এবং যুগের ইমামকে না চিনে ও তার বাইআত ( আনুগত্য ) না করে মৃত্যু বরণ করা যে জাহিলিয়াতের মৃত্যু এতদ সংক্রান্ত শিয়া - সুন্নী নির্বিশেষে মুসলিম উম্মাহর সকল ফিরকা ও মাযহাবের কাছে গৃহীত , প্রতিষ্ঠিত ( সাবিত ) , বিশুদ্ধ ( সহীহ ) মুতাওয়াতির হাদীস এবং ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর উলুল আমর ( কর্তৃত্বশীল কর্তৃপক্ষ ) হিসেবে বারো ইমামের অকাট্য হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে ১২ মাসূম ইমাম অবশ্যই মহানবীর (সা) অতি নিকটাত্মীয় রক্তজ বংশধর ( ইতরাৎعِتْرَةٌ ) আহলুল বাইতের ( আ ) অন্তর্ভুক্ত । স্মর্তব্য যে পবিত্র কুরআনের সঠিক ব্যাখ্যা , মহানবীর (সা) খাঁটি নির্ভেজাল হাদীস ও সুন্নাহ এবং সঠিক ইসলামী আকীদা বিশ্বাস ও শরিয়ত সংক্রান্ত সঠিক জ্ঞান একমাত্র আহলুল বাইতের (আ) কাছেই বিদ্যমান এবং তাঁরাই দ্বীনের আসল বৈধ কর্তৃপক্ষ ( উলুল আমর ) ও মার্জা ( অথরিটি ) যাদের কাছে ধর্মের জন্য মুসলিম উম্মাহ ও মানব জাতিকে রুজু করতেই হবে । স্মর্তব্য যে খোলাফা- ই রাশিদীনের সংখ্যা মাত্র চার জন যা বারোর চেয়ে অনেক কম , বনী উমাইয়ার খলীফাদের সংখ্যা ১২ এর অধিক , বনী আব্বাসের খলীফাদের সংখ্যাও ১২ এর অধিক এবং পরবর্তী খলীফাদের সংখ্যা বিংশ শতাব্দীর বিশের দশক পর্যন্ত ১২এর চেয়ে ঢের বেশী । সকল সুফী তরীকার পীর মাশায়েখের সংখ্যা হয় বারোর চেয়ে কম না হয় বেশি !! একমাত্র মহানবীর আহলুল বাইতের বারো মাসূম ইমামের যে বর্ণনা দেওয়া হল কেবল সেটাই বারো ইমামের হাদীসের সাথে সম্পূর্ণ মিলে যায় ও পূর্ণ সামঞ্জস্য শীল । আর শিয়া সুন্নী নির্বিশেষে সকল ইসলামী ফির্কা ও মাযহাবের কাছে গৃহীত ( মকবুল ) আকীদা বিশ্বাস হচ্ছে যে মুসলিম উম্মাহর সর্বশেষ ইমাম ও খলীফা হযরত ইমাম মাহদী (আ) যার নাম মহানবীর (সা) নামের অনুরূপ। অতএব বারো ইমামের হাদীসে এবং আহলুল বাইতের (আ) বারো তম (দ্বাদশ) মাসূম ইমামই হবেন আবশ্যিক ভাবে মুসলিম উম্মাহর সর্বশেষ ইমাম হযরত মাহদী ( আ ) । আর বারো ইমামের হাদীস ও প্রতিটি যুগেই যে মহান আল্লাহর মনোনীত ইমাম ও হুজ্জাত বিদ্যমান আছেন , কোনো যুগই যে মহান আল্লাহর মনোনীত ও নিযুক্ত ইমাম ও হুজ্জাত বিহীন হবে না এবং  যুগের ইমামকে না চিনে ও তাঁর আনুগত্য না করে মৃত্যু বরণ কারী যে জাহিলিয়াতের মৃত্যু বরণ করবে এতদ সংক্রান্ত অজস্র প্রতিষ্ঠিত সহীহ গৃহীত অকাট্য হাদীস থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় যে সর্বশেষ অর্থাৎ দ্বাদশ ইমাম মাহদীর ( আ ) দীর্ঘজীবন হবে যিনি কিয়ামত পর্যন্ত জীবিত ও বিদ্যমান থাকবেন । তবে যেহেতু উম্মাহর  অতি নগণ্য সংখ্যক ও সামান্য মুষ্টিমেয় অংশ ব্যতীত যালিম উমাভী ( উমাইয়া ) ও আব্বাসীয় খলীফাদের মোকাবেলায় সমগ্র মুসলিম উম্মাহ আহলুল বাইতের (আ) এই বারো ইমামের আনুগত্য ও তাঁদের সাহায্য করা থেকে বিরত ছিল যার ফলে ইমাম আলী ( আ ) ধর্ম ত্যাগী খারেজীদের হাতে শাহাদাত বরণ করেন , বেহেশতের যুবকদের নেতৃদ্বয় ইমাম হাসানকে বিষ দিয়ে এবং  ইমাম হুসাইনকে কারবালায় স্বীয় সঙ্গী সাথী সহ নৃশংস ভাবে শহীদ করা হয় অথচ উম্মাহর উচিত ছিল তাদেরকে সাহায্য করা  সেহেতু একাদশ ইমাম হাসান আল আস্কারীর ( আ ) শাহাদাতের পর তাঁর পুত্র দ্বাদশ ইমাম মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান আল মাহদী ( আ ) মহান আল্লাহর ইচ্ছায় গায়েব হয়েছেন অর্থাৎ অন্তর্ধানে ( গায়বাত ) চলে গেছেন ঠিক মেঘের আড়ালে সূর্যের মতো । আড়ালে থাকা সূর্য থেকে পৃথিবী যেমন পরোক্ষভাবে উপকৃত হয় ঠিক তেমনি গায়বত অর্থাৎ অন্তর্ধানে থাকা ইমাম থেকেও আমরা অর্থাৎ অভাগা দুর্ভাগা উম্মৎ পরোক্ষভাবে উপকার ( নাফ نفع ) পাচ্ছি । যখন এই উম্মৎ নিজেদেরকে দ্বাদশ ইমামের আনুগত্য ও শত্রুদের বিরুদ্ধে তাকে সাহায্য করার জন্য পূর্ণ প্রস্তুত হয়ে যাবে ঠিক তখনই মহান আল্লাহ তাঁকে আবির্ভুত করবেন এবং তখন মুসলিম উম্মাহ ও বিশ্ববাসী সর্বশেষ ইমাম মাহদী ( আ ) থেকে প্রত্যক্ষ ভাবে উপকৃত হবে । আহলুল বাইতের (আ) মাসূম ইমামদের অগণিত অকাট্য হাদীসে দ্বাদশ মাসূম ইমামের দীর্ঘকালীন অন্তর্ধানের বিষয়ও সবিশেষ গুরুত্বের সাথে উল্লেখিত আছে । অত্যচারী যালিম উমাভী ও আব্বাসীয় খলীফাদের প্রশাসন আহলুল বাইতের (আ) এ সব হাদীস ও জ্ঞান থেকে মুসলিম উম্মাহকে সঠিক ভাবে উপকৃত হতে দেয় নি বরং মুসলিম উম্মাহকে আহলুল বাইত (আ) থেকে দূরে সরিয়ে  রাখার জন্য তাদের মাঝে গ্রীক , রোমীয় , পারসিক , মিসরীয় , ভারতীয় ও চৈনিক অর্থাৎ বিধর্মী বিজাতীয় দের ভাবধারা , চিন্তা, দর্শন , মতবাদ , সভ্যতা , কৃষ্টি ও সংস্কৃতির বল্গাহীন ও অনিয়ন্ত্রিত প্রচার , প্রসার ও প্রচলন করে যারফলে মুসলিম বিশ্বে খারিজী , নাসিবী , বিদাতপন্থী , যিন্দীক , নাস্তিক্যবাদী , মুর্জিয়া , সুবিধাবাদী, ভোগবাদী , জাবরবাদী , মু'তাযিলা প্রভৃতি বিকৃত পথভ্রষ্ট ও ভণ্ড গোষ্ঠী ও মতবাদের উদ্ভব হয়েছিল ইসলামের প্রথম তিন শতাব্দীর মধ্যেই !! আর এ সব ভ্রান্ত মতবাদ , বিদাত, আকীদা বিশ্বাস , অন্যায় অনাচারের বিরুদ্ধে আহলুল 
বাইতের মাসূম ইমাম গণই সব সময় প্রাণান্তকর সংগ্রাম করেছেন, চেষ্টা চালিয়েছেন , বিশুদ্ধ খাঁটি নির্ভেজাল ইসলামকে তুলে ধরেছেন এবং উম্মাহর ইসলাহ ( সংশোধন ও সংস্কার ) করতে গিয়ে অত্যাচারী খলীফাদের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে প্রথম ইমাম আলী আ থেকে একাদশ ইমাম হাসান আল আস্কারীর পর্যন্ত ১১ মাসূম ইমাম ( আ ) একের পর এক শাহাদাত বরণ করেছেন ।
মুহাম্মাদ সজল মহানবীর (সা) আহলুল বাইতের ৬ষ্ঠ মাসূম ইমাম হযরত জাফার সাদিক্বের ( আ ) অগণিত কর্মকাণ্ড ও অবদানের মধ্য থেকে একটি (( যা হচ্ছে টলেমীয় বা বাত্লামূসীয় পৃথিবী কেন্দ্রিকতার ভ্রান্ত সূত্র বা তত্ত্ব খণ্ডন তা অর্থাৎ সূর্য কেন্দ্রিকতার তত্ত্ব ) তাঁর  এ লেখায় তুলে ধরেছেন । জ্ঞান - বিজ্ঞানে আহলুল বাইতের (আ) মাসূম ইমামদের ( আ ) মৌলিক অবদান সংক্রান্ত এ ধরণের লেখার অপরিসীম গুরুত্ব রয়েছে । আমার বিশ্বাস , আহলুল বাইতের (আ)  কর্মকাণ্ড এবং জ্ঞান বিজ্ঞানে তাঁদের অবদান , আদর্শ , শিক্ষা , দিকনির্দেশনা ও গঠনমূলক বাণী ( হাদীস ) এবং সীরাত সঠিক ভাবে তুলে ধরা হলে মুসলিম উম্মাহর যুবকরা যারা বস্তুবাদী ভোগবাদী পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদের আদর্শিক সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের শিকার তাদের অনেকেই আবার ইসলামের দিকে ফিরে আসতে ও আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠতে পারে ।
পাদটীকা সমাপ্ত
ইসলামী চিন্তাবিদ এবং গবেষক হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলেমিন মুহাম্মদ মুনীর হুসাইন খান,
১৩ যিলক্ব'দ ১৪৪৩ হিজরী
captcha