IQNA

ইসলামী সংস্কৃতিসমৃদ্ধ ব্রুনেই

10:52 - October 16, 2022
সংবাদ: 3472656
তেহরান (ইকনা): দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাগরঘেরা বোর্নিও দ্বীপের উত্তরে অবস্থিত ব্রুনেই দারুস-সালাম। ওমানভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংগঠন ইসলামিক এডুকেশনাল সায়েন্টিফিক অ্যান্ড কালচারাল অর্গানাইজেশনস কর্তৃক ২০১৯ সালের জন্য ব্রুনেই দারুসসালামকে এশিয়ার ইসলামী সংস্কৃতির রাজধানী করা হয়েছিল। শিক্ষাদীক্ষা ও সভ্যতা-সংস্কৃতির দিক থেকে ব্রুনেই একটি আধুনিক ও উন্নত রাষ্ট্র। প্রত্নতত্ত্ব ও স্থাপত্যের এক উজ্জ্বল নমুনা মুসলিমবিশ্বের কাছে তুলে ধরতেই সে বছর দেশটিকে ইসলামী সংস্কৃতির রাজধানী করা হয়েছিল।
বোর্নিও পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম দ্বীপ। দ্বীপের একটি অংশ ব্রুনেই, আর বাকি অংশে আছে ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া। দ্বীপটির পূর্ব, পশ্চিম ও দক্ষিণ দিক থেকে ঘিরে আছে মালয়েশিয়া। উত্তরে দক্ষিণ চীন সাগর। তেল উৎপাদনে দেশটি দক্ষিণ এশিয়ার তৃতীয় এবং গ্যাস রপ্তানিতে নবম স্থানে আছে। এ ছাড়া বস্ত্র, আসবাব, পশমসহ বিভিন্ন মূল্যবান খনিজ দ্রব্যে সমৃদ্ধ দেশটি। উন্নয়ন ও উন্নত জীবনমানের দিক থেকে সিঙ্গাপুরের পরই এর অবস্থান।
 
ব্রুনেইয়ের আয়তন পাঁচ হাজার ৭৬৫ বর্গকিলোমিটার। সিআইএর তথ্য মতে, বর্তমান জনসংখ্যা চার লাখ ৭৮ হাজার ৬৪। বন্দরসেরি বেগাওয়ান ব্রুনেইয়ের রাজধানী ও জনবহুল শহর। যাদের বেশির ভাগের ভাষা মালয়। ইসলাম দেশটির রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে স্বীকৃত। মোট জনসংখ্যার ৭৮.৮ শতাংশ মুসলিম। ব্রুনেই দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র রাষ্ট্র, যা ২০১৪ সাল থেকে শরিয়ার আলোকে পরিচালিত।
 
ব্রুনেই রাষ্ট্রের গোড়াপত্তন ঘটে খ্রিস্টপূর্ব সপ্তম শতাব্দীতে। তখনকার সময়ে এটি ‘বুনিও’ নামে ‘সিরিবিজায়া’ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ব্রুনেইয়ে ঠিক কখন ইসলাম এসে পৌঁছেছে তা সঠিকভাবে বলা যায় না। তবে বিভিন্ন স্থাপনা ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন থেকে বোঝা যায়, অন্তত দ্বাদশ শতাব্দীর আগে এখানে ইসলামের আগমন ঘটেছে। দেশের অনেক মুসলিমের কবর এটিই জানান দেয়। ঐতিহাসিকদের মতে, ১৩৭৬ সালে সুলতান মুহাম্মাদ শাহ (ওয়াং লেক বেতাতা) ইসলাম গ্রহণ করেন এবং ১৪০২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি ব্রুনেই রাজ্য শাসন করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর বংশধর শরিফ আলী নামের একজনের মাধ্যমে ইসলামের প্রচার ঘটে। তাঁর শ্বশুর সুলতান আহমদের পর রাজ্যের শাসনভার তিনি গ্রহণ করেন। অত্যধিক খোদাভীতি ও ন্যায়পরায়ণতার কারণে তিনি ‘সুলতানুল বারাকাহ’ বা পুণ্যবান শাসক উপাধি পান। তিনি সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেন ইসলামের শিক্ষা ও আদর্শ। তা ছাড়া ব্যবসায়ী, আলেম ও দায়িদের মাধ্যমেও সেখানে ইসলামের বিস্তার হয়।
 
ইসলামী ভাবাদর্শ বাস্তবায়নে ব্রুনেই সরকার ব্যাপক কাজ করেছে। উল্লেখযোগ্য কাজ হলো, সেরি বেগাওয়ানে ১৯৭২ সালে টিচার্চ কলেজ, ১৯৯১ সালে ইসলামী ব্যাংক, ১৯৯২ সালে দারুস সালাম ব্রুনেই (পবিত্র কোরআনের) মাসহাফ প্রকল্প সরকারিভাবে স্থাপিত হয়। ১৯৯৩ সালে তাহফিজুল কোরআন ইনস্টিটিউট, ১৯৯৯ সালে সুলতান ওমর আলী সাইফ ইসলামিক স্টাডিজ ইনস্টিটিউটসহ অনেক কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ও প্রতিষ্ঠা করা হয়। ২০১৪ সালে কার্যকর করা হয় শরিয়ার আলোকে ইসলামী দণ্ডবিধি। এ ছাড়া ২০০৯ সাল থেকে ‘ব্রুনেই হালাল’ নামে জাতীয় বাণিজ্যিক ব্র্যান্ড চালু করা হয়। এতে দেশ-বিদেশের মুসলিমরা নিশ্চিন্তে শরিয়ার বৈধ পণ্য কিনতে পারবে। পণ্য হালাল হওয়ার বিষয়টি সরকারই নিশ্চিত করে। আন্তর্জাতিক বিশ্বে ব্রুনেই সর্বপ্রথম এমন ব্র্যান্ড চালু করে।
 
সুলতান মুহাম্মদ হাসানের সময় ব্রুনেই সংবিধান প্রণয়নের পাশাপাশি শরিয়া অনুযায়ী রাষ্ট্র ও প্রশাসন পরিচালনার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সুলতান হাজি হাসান বালকিয়াহ মুইজ্জুদ্দিন ওয়াদ দাওলাহ ১৯৭০ সালের ৪ অক্টোবর ব্রুনেই নগরীর নাম পরিবর্তন করে ‘বন্দরসেরি বেগাওয়ান’ রাখেন। এ ছাড়া মহামান্য সুলতান হাজি বালকিয়াহ এটাও ঘোষণা দেন, ব্রুনেই দারুস সালাম ইসলামী শাসনব্যবস্থার আলোকে পরিচালিত হবে।
captcha