IQNA

হযরত খাদিজা (সা. আ.)এর প্রতি স্বয়ং আল্লাহ ও জিবরাইল (আ.) সালাম প্রেরণ করেছেন

23:10 - May 26, 2018
সংবাদ: 2605844
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ১০ই রমজান মহীয়সী নারী হযরত খাদিজার (সা. আ.) ওফাত দিবস। নবুয়তের অনেক আগ থেকেই আল্লাহ পাক খাদিজা(সা.)-কে তাঁর সহধর্মিণী হিসেবে নির্বাচন করেন, কেননা খাদিজার(সা. আ.) মধ্যে এমনসব গুণাবলী ছিল যা সকল দুর্যোগপূর্ণ মুহূর্তে, দ্বীনের খেদমতে শীর উঁচু করে, স্থবির-চিত্তে অগ্রসর হওয়ার অনুকূল ছিল। খাদিজা(সা.) সমস্ত উম্মাহর মধ্যে সেরা সাহাবী এবং ব্যক্তিত্বশালী ছিলেন শুধু তাই নয় সর্বকালের সেরা চার মহিলার মধ্যে তিনিও ছিলেন একজন।

 


বার্তা সংস্থা ইকনা'র রিপোর্ট: হযরত খাদিজাতুল কুবরা ২৫ বছর রাসূল(সা.)-এর সাথে জীবন-যাপন করেন এবং তার মধ্যে ১০ বছর ছিল রাসূল(সা.)-এর নবুয়ত লাভের পর।
তিনিই প্রথম নারী ছিলেন যিনি ইসলামের উদয়ান্তে সর্ব প্রথম ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। ২৫ বছর যাবত রাসূলের (সা.) সাথে যুগল জীবন যাপন করেন। এই দিনগুলিতে সর্বদা পরাক্রান্ত ও আত্মত্যাগী সাথী, দয়াশীল বন্ধু হিসেবে রাসূলের (সা.) সাথে ছিলেন।

হযরত খাদিজা (সা. আ.) নবুয়ত ঘোষণার দশ বছর পর ১০ই রমজান ইন্তেকাল করেন।

হযরত খাদিজার (সা. আ.) ওফাতের পর রাসূল (সা.) সর্বদা তাকে (সা. আ.) স্মরণ করতেন, তাঁর আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করতেন। কখনো কখনো এমনও হয়েছে যে, তিনি হযরত খাদিজার (সা. আ.)কথা স্মরণ করে এমনভাবে ক্রন্দন করতেন যে তার দু'চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরতো।

কারণ, রাসূল (সা.) হযরত খাদিজার (সা. আ.) গভীর ভালবাসা ও দয়ার ঝর্ণাধারাকে অবলোকন করেছিলেন। হযরত খাদিজার (সা. আ.) প্রতি রাসূলের (সা.) এই ধরনের আচরণের কথা ঐতিহাসিকভাবে স্মরণীয় হয়ে আছে। তার একটি উদাহরণ এখানে উল্লেখ করবো:

একদিন রাসূল (সা.) তাঁর কয়েকজন সহধর্মিণীর সাথে ছিলেন হঠাৎ করে হযরত খাদিজার (সা. আ.) প্রসঙ্গে আলোচনা শুরু হল, রাসূল (সা.) এত বেশী স্পর্শকাতর হয়ে উঠলেন যে, তাঁর দু'চোখ থেকে অশ্রু ঝড়তে লাগলো।

নবীর (সা.) জীবনধারার উপর লেখা "সাবকে জিন্দেগী রাসুলে খোদা (সা.)" গ্রন্থের লেখক হযরত খাদিজা (সা. আ.)এর জীবনীর প্রতি দৃষ্টিপাত করেছে বলেছেন: ইমাম বাকির (আ.) হতে বর্ণিত হয়েছে: "হযরত মুহাম্মাদ (সা.) মিরাজ থেকে ফিরে আসার পথে হযরত জিবরাইলকে (আ.) বললেন, আপনার কোন ইচ্ছা আছে? হযরত জিবরাইল (আ.) উত্তরে বললেন: আমার ইচ্ছা আপনি আমার এবং মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে হযরত খাদিজা (সা. আ.)কে সালাম পৌঁছে দেবেন।"
নবীর (সা.) জীবনধারার উপর লেখা "সাবকে জিন্দেগী রাসুলে খোদা (সা.)" গ্রন্থের লেখক ফারজানা হাকিম জাদে বার্তা সংস্থা ইকনার সাথে এক সাক্ষাৎকারে বলেন: হযরত মুহাম্মাদ (সা.)এর জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময়ে পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন হযরত খাদিজাতুল কুবরা (সা. আ.)। তিনি তাঁর জীবনের সকল অর্থ ও সম্পদ ইসলামের পথে উৎসর্গ করেছেন।
হযরত খাদিজা (সা. আ.)এর ওফাতের ১০ বছর পর হযরত মুহাম্মাদ (সা.) ইন্তেকাল করেন। তিনি জীবিত থাকা অবস্থায় অর্থাৎ দীর্ঘ ৩০ বছর সম্বলিত জীবনে হযরত মুহাম্মাদ (স.)এর অন্য কোন স্ত্রী ছিল না। হযরত খাদিজা (সা. আ.) ইন্তেকালের পর হযরত মুহাম্মাদ (সা.) সর্বদা এই মহীয়সী নারী কথা স্মরণ করতেন।
হাকিম জাদে বলেন: হযতর খাদিজা (সা. আ.)এর ওফাতের পর হযরত মুহাম্মাদ (সা.) তাঁর জীবনে শেষ ১০ বছরে বাকী স্ত্রীদের গ্রহণ করেছেন। হযরত মুহাম্মাদ (সা.) তাঁর শেষ জীবনে যেসকল বিয়ে করেছেন সেগুলো সাধারণত জাহেলিয়াতের যুগের কোন প্রচলিত প্রথা ভাঙ্গার জন্য অথবা রাজনৈতিক কিম্বা বিধবা নারীদের সমর্থন বা বিভিন্ন গোত্রের মধ্যে সন্ধি স্থাপনের … জন্য করেছেন।
জামিয়াতুজ জাহরার বিজ্ঞান বিভাগের সদস্য আরও বলেন: জাহেলিয়াতের যুগে হেজাজে যখন নারীদের সতীত্বের প্রমাণ খুবই কম পাওয়া যেত, তখন হযরত খাদিজা (সা. আ.) ছিলেন: সতীত্ব এবং পবিত্র নারী। অপর দিক থেকে ইসলামের শুরুতে যখন হযরত মুহাম্মাদ (সা.)এর কোন সাথী ছিল না এবং সকলে তাঁকে শত্রুর চোখে দেখত, ঠিক তখনই তিনি তাঁর পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন এবং তার জীবনে অর্জিত অঢেল অর্থ ও সম্পদ ইসলামের জন্য বিলিয়ে দেন।
তিন আরও বলেন: বিবি খাদিজা (সা. আ.)এর সাথে হযরত মুহাম্মাদ (সা.)এর পরিচয় ঘটে এক ব্যবসায়িক সফরে। হযরত খাদিজার (সা. আ.) হয়ে তার স্থানে স্বয়ং হযরত মুহাম্মাদ (সা.)এর ব্যবসায়িক সফরে অংশগ্রহণ করেন।
তিনি বলেন: আমাদের প্রিয় নবিজী (সা.) মুহাম্মাদ আমিন নামের প্রসিদ্ধ ছিলেন। এই ব্যবসায়িক সফরে হযরত মুহাম্মাদ (সা.)এর আমানতদারী দেখে হযরত খাদিজা (সা.) বিস্ময় হন এবং তাঁর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেন। তিনি পয়গাম্বর (সা.)এর প্রতি আকৃষ্ট হন এবং হযরত মুহাম্মাদ (সা.)এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পর তাদের ভালবাসা পূর্ণতায় পৌছায়।
হাকিম জাদে বলেন: হযরত খাদিজা (সা. আ.)এর অঢেল সম্পদ থাকা সত্ত্বেও সম্পদের প্রতি
তাঁর কোন আকর্ষণ ছিল না। তিনি তাঁর সকল সম্পদ ইসলামের পথে উৎসর্গ করে দেন।
জামিয়াতুল যাহরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা হযরত খাদিজা (সা. আ.)এর শানে বলেন: হযরত খাদিজা (সা. আ.)এর ওফাতের পর হযরত মুহাম্মাদ (সা.) যখনই তাকে স্মরণ করতের সম্মানের সাথে স্মরণ করতেন। আর এর কারণে হযরত মুহাম্মাদ (সা.)এর অন্যান্য স্ত্রীদের ঈর্ষার কারণ হত। কিন্তু আহলে সুন্নতের হাদিসে এই সমস্যা অতিরঞ্জিত করে উল্লেখ করেছে। যেগুলোর অধিকাংশ সানাদ জাল।
তিনি আরও বলেন: হযরত মুহাম্মাদ (সা.) যখনও হযরত খাদিজা (সা. আ.)কে স্মরণ করতেন তাঁর প্রশংসা করতেন। মাঝেমধ্যে হযরত খাদিজা (সা. আ.)এর বান্ধবীদের জন্য হাদিয়া পাঠাতেন এবং যদি হযরত মুহাম্মাদ (সা.)এর বাড়ীতে তারা আসতেন তাহলে তাদেরও সম্মান করতেন।
নবীর (সা.) জীবনধারার উপর লেখা "সাবকে জিন্দেগী রাসুলে খোদা (সা.)" গ্রন্থের লেখক হযরত খাদিজা (সা. আ.) তিনটি বিশেষ গুনের কথা স্মরণ করে বলেন: হযরত খাদিজা (সা. আ.) প্রথম গুন হচ্ছে তিনি অনেক সম্পদশালী ছিলেন এবং তাঁর সকল সম্পদই ইসলামের পথে উৎসর্গ করেছেন। দ্বিতীয় গুন হচ্ছে হযরত মুহাম্মাদ (সা.)এর সন্তানদের মাতা ছিলেন এবং তৃতীয় গুন হচ্ছে মহান আল্লাহ ও হযরত মুহাম্মাদ (সা.)এর প্রতি অটুট ঈমান ছিল।

iqna

captcha